বাংলাদেশের বন্যাপীড়িত ও জলাবদ্ধ অঞ্চলে কৃষিকাজ সচল রাখার জন্য উলম্ব ভাসমান খামারে (ভার্টিক্যাল ফ্লটিং বেড) একক স্থান হতে অধিক ফসল উৎপাদন করে ক্রম-হ্রাসমান ভূমির ওপর চাপ কমানোর এক অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন এবং কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন, বিভাগের দুই শিক্ষার্থী আসিফ আল রাযী নাবিল ও সাদিয়া আশরফি ফাইরুজ। সদ্য উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল লালশাক চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তারা।
প্রযুক্তিটি সম্পর্কে গবেষকরা জানান, চট, বাঁশ, সিপিভিসি পাইপ এবং পানির ড্রাম ব্যবহার করে তারা একটি বিশেষ কাঠামো তৈরি করেন যাতে ৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২ ফুট প্রস্থের তিনটি উলম্ব স্তর রয়েছে। স্তরগুলি চার ইঞ্চি পুরুত্বের মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। প্রতিটি স্তরের মধ্যে দুই ফুট করে ফাঁকা যায়গা রাখা হয়েছে যাতে করে উৎপাদিত চারা গাছগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস পেতে পারে। পুরো কাঠামোটি তিনটি পানির ড্রাম ব্যবহার করে পানির উপরে ভাসানো হয়। প্রস্তুতকৃত স্তরগুলিতে যেকোনো ধরনের শাকজাতীয় উদ্ভিদ চাষ করা যাবে বলে জানান তারা। পানির ওপর ভাসমান বিধায় সেচ দিতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না কৃষকদের।
গবেষকরা আরও বলেন, বন্যাক্রান্ত অঞ্চলে বদ্ধ পানির ওপর কাঠামোটি ভাসিয়ে কৃষকরা অনায়াসেই চাষাবাদ করতে পারবেন এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কাঠামোটি শুকনো অনাবাদি জমির ওপর স্থাপন করে কৃষিকাজ সচল রাখা যাবে।
আরও পড়ুন: অপো’র নতুন স্মার্টফোন রেনো৪ শিগগিরই দেশের বাজারে
ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে তারা কাঠামোটিতে উচ্চফলনশীল লালশাকের চাষ করেছেন এবং সফল হয়েছেন। সম্পূর্ণরূপে অব্যবহার্য জলাবদ্ধ ভূমির ওপর কাঠামোটি স্থাপন করে তিনটি উলম্ব স্তরে চাষাবাদ করার ফলে তারা কম জায়গা ব্যবহার করে অধিক ফলন নিয়ে আসতে পেরেছেন যা গতানুগতিক চাষাবাদ পদ্ধতিতে পাওয়া অসম্ভব। সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য উপাদান দিয়ে তৈরি এই কাঠামোটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে।
আরও পড়ুন: স্যামসাং বাজারে নিয়ে এলো বাজেটবান্ধব গ্যালাক্সি এম০২এস
গবেষকরা আশা প্রকাশ করেন, এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে কৃষকরা অধিক ফলন ঘরে তুলতে পারবেন যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাওয়ায় এই প্রযুক্তি আমাদের দেশের জন্য খুবই উপযোগী। দেশের হাওরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে বছরব্যাপী কৃষিকাজ অব্যাহত রাখতে উদ্ভাবনটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন গবেষকরা।